নোয়াখালী সরকারি কলেজেরইতিহাস
১৯৬২ সালে জেলার স্থায়ী সদর মাইজদীতেই প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের পর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গ জেলা সদরে একটা কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নোয়াখালী কলেজ প্রতিষ্ঠা, স্থানান্তর ও উন্নয়ন চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। পুরানো বার লাইব্রেরিতে এ নিয়ে ১৯৬৩ সালে মে-জুনে সভা হয়। জনাব আবদুল মালেক উকিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় একটা কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রস্তাব উত্থাপন করেন একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান, সে-সময়কার তরুণ নেতা জনাব শফিকুর রহমান। তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জনাব মনসুরুল হক (সাবু উকিল) সর্বসম্মতিক্রমে সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি, তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা জনাব আবদুল মালেক উকিল এবং প্রাক্তন পার্লামেন্ট সদস্য জনাব আবদুর রশিদকে সহ-সভাপতিকে, জনাব মোহাম্মদ মছউদ মোক্তারকে সম্পাদক, জনাব আহছান উল্যাহ (বালক নেতা), জনাব মকবুল আহমেদ উজ্জ্বলপুরী, জনাব শফিকুর রহমান, শহীদ উদ্দিন ইস্কান্দার কচি প্রমুখকে সদস্য নির্বাচিত করে মাইজদী কলেজের একটা শক্তিশালী সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে মাইজদী কলেজই নোয়াখালী কলেজ নামকরণ হয়। প্রথমে পৌর কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ে সকাল বেলায় কলেজের ক্লাস নেবার সিদ্ধান্তও হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বাবু প্রফুল্ল ভট্ট মহোদয় সামগ্রিক সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেছিলেন। পরবর্তীতে তৎকালে বিলুপ্ত মাইজদী হাই স্কুলের পরিত্যক্ত টিনশেড এবং জমি-জমা কলেজের কাজে ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তাগণ। এ পর্যায়ে তাঁরা মাইজদী ঠাকুর বাড়ির বিশিষ্ট দানবীর স্বর্গীয় চিন্তাহরণ চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সানন্দে ১.২২ শতাংশ জমি এবং পুরাতন মাইজদী হাই স্কুলের পরিত্যক্ত ভবন কলেজের নামে দান করেন। বস্তুত তাঁরই বদান্যতায় কলেজ নিজস্ব জমির উপর নিজস্ব ভবনে কাজ শুরু করার সুযোগ পেল।
১৯৬৩ সালের ১ আগস্ট কলেজের কাজ শুরু হয়। এর মাসাধিক কাল পরেই তৎকালে চাঁদপুর কলেজে কর্মরত অর্থনীতির অধ্যাপক জনাব এ কে মোহাম্মদ উল্যাহকে প্রথম অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি যোগদান করেন। প্রাথমিক অবস্থায় কলেজে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ খোলা হয়। প্রথম বছরই প্রায় সাড়ে পাঁচশ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়। এত বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হওয়ায় সাংগঠনিক কমিটি দারুনভাবে উদ্বুদ্ধ হন এবং ১৯৬৫ সালেরই বাণিজ্য ও কলায় স্নাতক কোর্স প্রবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোজন লাভে সমর্থ হয়। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান কোর্স প্রবর্তন করা হয়। এ বছরই কলেজ উন্নয়ন পরিকল্পনাভুক্ত হয়। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী মফিজ উদ্দিন কলেজ পরিদর্শন করেন। কলেজ সরকারিকরণ ১৯৬৭ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক গর্ভনর কলেজ পরিদর্শন করে ঢাকা ফিরে গিয়েই কলেজটা সরকারিকরণের নির্দেশ দেন। তাঁরই নির্দেশেই ১৯৬৮ সালের ১ মার্চ নোয়াখালী কলেজ পরিণত হয় নবম সরকারি কলেজে।
১৯৬৯ সালের ২৫ একর জমি নিয়ে পুরাতন ক্যাম্পাস থেকে জেলা থানা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ কলেজ ভবনাদি নির্মিত হবার কথা ছিল।কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে মূলতঃ পৌর এলাকার বাইরে যাতায়াতে সমস্যার কারণে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকদের অধিকাংশই কলেজ শহর এলাকায় স্থানান্তরের জন্য প্রস্তাব করেন। ১৯৭৪ সালে শিক্ষামন্ত্রী ড. মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী দু’বার পরিদর্শন করে শহর এলাকায় কলেজ স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। একটা সরকারি ডিগ্রি কলেজের জন্য ১৫ মে ১৯৭৯ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ কার্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে বর্তমান কলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২৭ জুলাই, ১৯৮৫ প্রফেসর আবদুল জলিল অধ্যক্ষের পদ অলংকিত করার পর কলেজের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন করেন।
১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন মহাপরিচালক ড. এইচ এম করিম কলেজ পরিদর্শনে আসেন। ১৯৮৬ সালের ২৫ মার্চ অনার্স উপযোজনের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রয়োজনীয় ফিসসহ আবেদন করা হয়। ১৯৮৭ সালে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১৫ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পভ‚ক্ত করা হলো কলেজকে। এ প্রকল্পের আওতায় একটা আধুনিকবিজ্ঞান ভবন, বাণিজ্য ভবন এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন নির্মাণ করা হয়। নানা প্রতিক‚ল অবস্থার মাঝেও ১৯৯০ সালের জুলাই মাসে কলেজ নূতন ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৯১-১৯৯২ শিক্ষাবর্ষে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও হিসাববিজ্ঞানে অনার্স কোর্সে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়।
সময় গড়িয়ে এমন জায়গায় এসে দাঁড়ালো যখন মাষ্টার্স কোর্স প্রবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ২০-২২ তারিখ মন্ত্রণালয়ে সভা করেন। ১৯৯৪ সালে পাঁচটি বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্সপ্রবর্তনের অনুমতি লাভ করে। ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে হিসাববিজ্ঞান, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাষ্টার্স প্রথম পর্বে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করি। ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতিতে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়।